বাংলাদেশের অন্যতম রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সোনালী ব্যাংক লিমিটেড এখন ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবাকে আরও সহজ করেছে “Sonali e-Wallet” অ্যাপের মাধ্যমে। আপনি চাইলে খুব সহজেই নিজের মোবাইল ফোন থেকেই ব্যাংকিং সেবা নিতে পারেন—যেমন টাকা পাঠানো, বিল পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জ, ইত্যাদি।
চলুন জেনে নেই কীভাবে সোনালী ব্যাংক ই-ওয়ালেট রেজিস্ট্রেশন করবেন ধাপে ধাপে
“আপনার ফোনটা বের করুন, খুলে ফেলুন সেই যাদুর বাক্স — সোনালী ই-ওয়ালেট অ্যাপ! ট্যাপ দিলেই শুরু হবে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের দুনিয়া!”
লগইন হয়ে গেলে সোনালী ই-ওয়ালেটের প্রধান পেজে চলে আসবেন। এই পেজের একদম নিচের দিকে তাকালেই দেখবেন — এক চমৎকার অপশন, নাম তার “বিনিময়”
ওখান থেকেই শুরু হয় লেনদেনের আসল খেলাটা
“বিনিময়” অপশনে ক্লিক করলেই খুলে যাবে এক নতুন দুনিয়া। এখানে নতুন ব্যবহারকারীদের জন্য অপেক্ষা করছে রেজিস্ট্রেশনের সোনালী সুযোগ। যারা এখনো ই-ওয়ালেটের পরিবারে যুক্ত হননি, তাদের জন্য নিচে ঝলমল করে থাকবে “New User Registration” লিংক। এই লিংকে ক্লিক করলেই শুরু হবে আপনার ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের প্রথম পদক্ষেপ, একদম নিজের হাতে সোনালী ভবিষ্যতের চাবি ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো অনুভূতি হবে তখন।
রেজিস্ট্রেশনের সময় কয়েকটি ধাপ খুব মনোযোগ দিয়ে অনুসরণ করতে হবে। প্রথমেই নিজের পছন্দমতো একটি ভার্চুয়াল আইডি তৈরি করতে হবে। এই ভার্চুয়াল আইডিটিই হবে আপনার বিনিময়ের ইউনিক আইডি, যা দিয়ে পরবর্তীতে আপনি সব ধরনের লেনদেন সম্পন্ন করবেন।
নতুন ব্যবহারকারীরা বা যারা এখনো বিনিময়ে রেজিস্ট্রেশন করেননি, তারা ভার্চুয়াল আইডি দেওয়ার পর পাশের চেক বাটনে ক্লিক করে দেখে নিতে হবে— আইডিটি আগে থেকে ব্যবহার হচ্ছে কি না। যদি দেখা যায় আইডিটি আগে থেকেই নেওয়া আছে, তাহলে এর সাথে কিছু সংখ্যা যেমন 123 বা 2025 যোগ করে একটি নতুন আইডি তৈরি করা যাবে।
সবশেষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো— ভার্চুয়াল আইডি লেখার সময় কোনো স্পেস না রাখা। যেমন, “aziz ul haque@binimoy” না লিখে সঠিকভাবে লিখতে হবে “azizulhaque@binimoy”। এইভাবে দিলে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া হবে নির্ভুল এবং ঝামেলামুক্ত।
রেজিস্ট্রেশনের ফর্মে কিছু অপশনাল ফিল্ড থাকে, যেগুলো না দিলেও কোনো সমস্যা নেই। এগুলো শুধু অতিরিক্ত তথ্য হিসেবে কাজ করে।
যদি আপনি আগে থেকেই বিনিময়-এ রেজিস্ট্রেশন করে থাকেন, তাহলে আবার নতুন করে রেজিস্ট্রেশন করার প্রয়োজন নেই। শুধু লগইনের সময় আগের ভার্চুয়াল আইডি, ইমেইল, ওয়ালেট পিন এবং বিনিময় পিন দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। এতে নতুন রেজিস্ট্রেশন না হয়ে, আপনার সোনালী ব্যাংক অ্যাকাউন্টটি সরাসরি সেই ভার্চুয়াল আইডির সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাবে। সবকিছু ঠিকভাবে হলে আপনি স্ক্রিনে দেখতে পাবেন – “রেজিস্ট্রেশন সফল”!
রেজিস্ট্রেশনের সময় আপনার ফোনের লোকেশন অন রাখতে হবে এবং সোনালী ই-ওয়ালেট অ্যাপকে লোকেশন পারমিশন দিতে হবে। এটি নিরাপত্তা যাচাইয়ের অংশ, তাই এটি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
যদি আপনি সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমেই রেজিস্ট্রেশন করেন, তাহলে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও ওয়ালেট অ্যাকাউন্ট—দুটিই একসাথে বিনিময় রেজিস্ট্রেশনে যুক্ত হয়ে যাবে। এখানে আপনার অ্যাকাউন্টের শেষ তিনটি সংখ্যা ব্যবহার করা হবে “এলিয়াস” নামে।
বাংলাদেশ ব্যাংক যখন এলিয়াস ট্রান্সাকশন চালু করবে, তখন আপনি চাইলে শুধুমাত্র সেই এলিয়াস ব্যবহার করেই লেনদেন করতে পারবেন। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ব্যাংক অ্যাপ আপডেট করার পর এলিয়াস পরিবর্তনের সুযোগও থাকবে।
রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলে ই-ওয়ালেটের “বিনিময়” মেনুতে ক্লিক করুন। ক্লিক করলেই চোখের সামনে ভেসে উঠবে বিনিময়ের মূল হোম পেজ। এখান থেকেই শুরু হবে আপনার ডিজিটাল লেনদেনের আসল যাত্রা — যেখানে আপনি সহজেই টাকা পাঠানো, গ্রহণ করা ও অন্যান্য সব ফিচার ব্যবহার করতে পারবেন।
ডিরেক্ট পে (Direct Pay):
বিনিময়ের মাধ্যমে সরাসরি টাকা পাঠাতে চাইলে আপনাকে যেতে হবে “ডিরেক্ট পে” অপশনে। সেখানে যার কাছে টাকা পাঠাতে চান, তার ভার্চুয়াল আইডি লিখতে হবে। আইডি টাইপ করে পাশে থাকা “ফেচ” বা চেক বোতামে ক্লিক করলেই সেই ব্যক্তির নাম স্ক্রিনে দেখা যাবে — এতে নিশ্চিত হতে পারবেন, টাকা সঠিক ব্যক্তির কাছেই যাচ্ছে।
রিসিভারের নাম নিশ্চিত হওয়ার পর দিতে হবে পরিমাণ (Amount), টাকার উদ্দেশ্য (Purpose), এবং শেষে ওয়ালেট পিন। সব ঠিকঠাক হলে “Submit” বাটনে ক্লিক করলেই টাকা পাঠানো সম্পন্ন হবে।
তবে মনে রাখবেন — টাকা কাটা বা ডেবিট হবে আপনার ওয়ালেট ব্যালেন্স থেকে। তাই লেনদেনের আগে অবশ্যই আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ওয়ালেটে টাকা ট্রান্সফার করে নিতে হবে, যাতে লেনদেন ব্যর্থ না হয়।
ওয়ালেট পিন দিয়ে Submit করার পরপরই পরবর্তী ধাপে আপনাকে দিতে হবে বিনিময় পিন। এটি লেনদেনের অতিরিক্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অপরিহার্য।
বিনিময় পিন দেওয়ার পর আসবে OTP (One Time Password) দেওয়ার ধাপ। আপনার নিবন্ধিত মোবাইল নম্বরে একটি ওটিপি কোড পাঠানো হবে। সেই কোডটি নির্দিষ্ট ঘরে লিখে Confirm বা Submit করলে লেনদেন সম্পন্ন হবে।
যদি কোনো সার্ভিস চার্জ প্রযোজ্য থাকে, সেটিও এই ধাপে স্ক্রিনে দেখানো হবে, যাতে আপনি আগেই জানেন কত টাকা কাটা হবে। সবকিছু সঠিকভাবে সম্পন্ন হলে আপনি একটি সফল লেনদেনের বার্তা দেখতে পাবেন, এবং টাকা নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে যাবে।
ওটিপি (OTP) কোডটি দিয়ে Submit করলে সঙ্গে সঙ্গে স্ক্রিনে একটি সফল লেনদেনের (Transaction Successful) পপ-আপ দেখা যাবে। এতে আপনার পাঠানো টাকার পরিমাণ, রিসিভারের নাম ও লেনদেন নম্বর দেখাবে। এই বার্তাটি প্রমাণ করে যে আপনার ডিরেক্ট পে ট্রান্সফার সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং টাকা নিরাপদে পৌঁছে গেছে গন্তব্যে।
ট্রান্সাকশন হিস্টোরি (Transaction History):
এই মেনুতে গিয়ে গ্রাহক সহজেই নিজের সব লেনদেনের বিস্তারিত তথ্য দেখতে পারবেন। কোন তারিখে, কত টাকা, কার কাছে পাঠিয়েছেন বা কার কাছ থেকে পেয়েছেন — সবকিছু এক জায়গায় পরিষ্কারভাবে দেখা যাবে। এটি মূলত আপনার ই-ওয়ালেটের হিসাব খাতা, যেখানে প্রতিটি লেনদেনের রেকর্ড নিরাপদভাবে সংরক্ষিত থাকে।
রিটেই পে (RTP – Request To Pay):
RTP মানে হলো কারও কাছ থেকে টাকা পাওয়ার অনুরোধ করা। অর্থাৎ, আপনি কাউকে সরাসরি টাকা চাইতে পারবেন এই ফিচারের মাধ্যমে।
“RTP” মেনুতে ক্লিক করলে যার কাছে টাকা চাচ্ছেন, তার ভার্চুয়াল আইডি (VID) দিতে হবে। আইডি টাইপ করার পর সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঐ ব্যক্তির নাম দেখাবে — তখন রিসিভার সঠিক কিনা তা নিশ্চিত করুন।
এরপর দিন টাকার পরিমাণ (Amount), উদ্দেশ্য (Purpose) এবং আপনার পিন (PIN)। সবকিছু ঠিকঠাক দিলে অনুরোধটি তৈরি হবে এবং সঙ্গে সঙ্গেই একটি RTP আইডি স্ক্রিনে দেখাবে।
এই আইডিটিই হলো আপনার “টাকা চাওয়ার রসিদ” — যেটি পরবর্তীতে ট্র্যাক করা বা ফলোআপ করার জন্য ব্যবহার করতে পারবেন।
পেন্ডিং RTP (Pending RTP):
এই মেনুর মাধ্যমে গ্রাহক দেখতে পারবেন — কার কার কাছ থেকে তিনি RTP অনুরোধ পেয়েছেন এবং কাকে কাকে নিজে টাকা চাওয়ার অনুরোধ পাঠিয়েছেন। অর্থাৎ, এটি আপনার সব অপেক্ষমাণ লেনদেন অনুরোধের তালিকা।
প্রতিটি RTP নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কার্যকর থাকে। বর্তমানে সেই সময়সীমা ৩০ মিনিট। এই সময়ের মধ্যে আপনি চাইলে কোনো অনুরোধ অ্যাকসেপ্ট (Accept) করতে পারেন, অথবা প্রয়োজনে রিজেক্ট (Reject) করতে পারেন। সময়সীমা পেরিয়ে গেলে অনুরোধটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাবে।
ডিফল্ট অ্যাকাউন্ট (Default Account):
এই মেনু থেকে গ্রাহক নিজের পছন্দমতো নির্ধারণ করতে পারেন— কোন অ্যাকাউন্টটি তার ডিফল্ট অ্যাকাউন্ট হিসেবে থাকবে। অর্থাৎ, আপনি চাইলে ওয়ালেট অ্যাকাউন্ট বা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট— যেকোনো একটি ডিফল্ট করে রাখতে পারেন।
যে অ্যাকাউন্টটি “All Default” হিসেবে সেট করবেন, বিনিময়ের প্রতিটি লেনদেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই অ্যাকাউন্ট থেকেই ডেবিট (কাটা) হবে বা সেই অ্যাকাউন্টেই ক্রেডিট (জমা) হবে।
যদি “Default Debit Account” নির্বাচন করেন, তবে সব লেনদেনে টাকা সেই অ্যাকাউন্ট থেকেই কাটা হবে। আবার “Default Credit Account” নির্বাচন করলে, লেনদেনের টাকা সেই অ্যাকাউন্টেই জমা হবে।
তবে সবচেয়ে নিরাপদ উপায় হলো — “All Default” অপশনটি সক্রিয় রাখা, যাতে আপনার লেনদেনগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে ও সহজে সম্পন্ন হয়।










