মুখে হাসি ফুটানোর জায়গাটাই এখন অনেকের জন্য ভয়াবহ বিপদের কারণ হয়ে উঠছে! হ্যাঁ, কথা হচ্ছে মুখগহ্বরের ক্যানসার নিয়ে—বাংলাদেশে এই রোগ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েই চলেছে। চিকিৎসকদের মতে, মুখ বা খাদ্যনালির যেকোনো অংশে ক্যানসার হলে খাবার গিলতে কষ্ট হয়, কথা বলা কঠিন হয়, আর রোগীর জীবনযাত্রা পুরোপুরি পাল্টে যায়। সবচেয়ে চিন্তার বিষয় হলো—প্রতিবছর নতুন রোগীর সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে!
তামাকই মুখের ক্যানসারের প্রধান অপরাধী
বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, মুখের ক্যানসারের পেছনে সবচেয়ে বড় “ভিলেন” হলো তামাক ও তার পরিবার। সিগারেট, ই-সিগারেট, পান, সুপারি, চুন, জর্দা, গুল, খইনি—এসবের নিয়মিত ব্যবহার মুখ ও খাদ্যনালির কোষে ক্ষত তৈরি করে। সেই ক্ষতই সময়ের সঙ্গে ক্যানসারে পরিণত হয়।
বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ভয় ধরিয়ে দেয়—মুখগহ্বর ও খাদ্যনালির ক্যানসারে আক্রান্তদের ৮০–৯০ শতাংশই তামাকজাত পণ্য সেবনকারী।
তামাক ছাড়াও মদ্যপান, মুখের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব, দাঁতের ধারালো অংশ, এমনকি অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবারও এই রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে তো বিপদ আরও বাড়ে।
উপসর্গ: ছোট ঘা বড় বিপদের বার্তা
চিকিৎসকদের মতে, মুখে কোনো ঘা বা ক্ষত যদি দুই থেকে তিন সপ্তাহেও না শুকায়, তাহলে সেটি ক্যানসারপূর্ব লক্ষণ হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত বায়োপসি পরীক্ষা করানো উচিত।
বিশেষ করে যাঁরা ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, রিউমাটিক ডিজিজ বা পরিপাকতন্ত্রের রোগে ভোগেন, কিংবা দীর্ঘদিন স্টেরয়েড খান, তাদের এই বিষয়ে আরও সতর্ক হতে হবে। কৃত্রিম দাঁত ব্যবহারকারী ও ধূমপায়ীদের মুখে কোনো রকম ক্ষত দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।
যদি দেখা যায় ঘা শুকাতে সময় নিচ্ছে, রক্তপাত হচ্ছে, গিলতে অসুবিধা হচ্ছে বা গলায় কিছু আটকে থাকার অনুভূতি রয়েছে—তাহলে তা অবহেলা নয়, বরং অ্যালার্ম বেল হিসেবে ধরতে হবে।
প্রতিরোধই মুখের ক্যানসারের সেরা ওষুধ
চিকিৎসকদের মতে, সামান্য কিছু অভ্যাস বদলেই মুখগহ্বরের ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকটা কমানো সম্ভব।
প্রতিরোধে করণীয়:
-
তামাক ও তামাকজাত সব ধরনের পণ্য সম্পূর্ণ পরিহার করতে হবে।
- প্রতিদিন অন্তত দুইবার দাঁত ব্রাশ এবং খাওয়ার পর কুলকুচি করা অভ্যাসে আনতে হবে।
- দাঁতের ধারালো অংশ থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসা নিতে হবে।
- খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত ফল, শাকসবজি ও আয়রনসমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে।
- ফাস্টফুড ও প্রক্রিয়াজাত খাবার যতটা সম্ভব কম খেতে হবে।
- অতিরিক্ত অ্যাসিডিটি বা ঝাল-গরম খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।
- মদ্যপান ও সব ধরনের মাদক থেকে দূরে থাকতে হবে।
চিকিৎসকদের মতে, সচেতনতা ও জীবনযাপনে সামান্য পরিবর্তন আনলেই মুখের ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
শেষ কথা একটাই—তামাককে বিদায় দিন, জীবনকে নয়।
